ভিবি নিউজ মিডিয়া- লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ্জামান আশরাফ উনার এফবিতে সুনিপুন হস্তে মনের মাধুরী মিশিয়ে ছাত্র জীবনের স্মৃতি কথা তুলে ধরেন।সেখানে লিখেন, সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র আমি, সেই বিষয়টি হুবহু তুলে ধরলাম- সোশাল চেঞ্জ বা সামাজিক পরিবর্তন পড়েছি কতবার।অনেক সমাজের নানান পরিবর্তন পড়লাম,জানলাম কিন্তু মানুষের অনেক পরিবর্তনই দেখি যা পরিবর্তনের রূপ যেন স্বাভাবিক ব্যাতয় যেন প্রস্ফুটিত পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক।তাইতো সমাজ বদলায় আর বদলায় মানুষ।আর কত মানুষ যেন কত সহজেই কত অনাকাঙ্ক্ষিত রূপে বদলায়।
কত চেনা,কত আপন,কত সময় ক্ষণে সুর বেসুরে পার করা দিনাপাত করা চির চেনা মানুষ খুব সহজেই কেমন যেন অনেক দুরের হয়ে যায়।কিভাবে যেন স্বাভাবিক সেই দিনের যাপিত জীবন নিমিষেই স্মৃতি থেকে উচ্ছেদ করে ফেলে অন্য সৃষ্ট আচরণের আত্মস্থ হয়ে খুব আপন একান্ত কাছের মানুষ সময়ের ফোড়ে উচ্চাধীনে আসীন হয়ে উঠা খুব সহজেই পাল্টে ফেলে সহজে বেড়ে উঠা পেছনের সেই দিনগুলি।কেমনে যে বদলায় নিজেকে সেই সবের থেকে?
এমনই চরিত্র বোধ হয় এমন মানুষদের।এটাই বোধ হয় এদের জিন।সময়েই হয়তো কাছের চরিত্র জাগিত হয়,জাত তার যে স্বরূপ, সময়েই তার রূপ জাগ্রত হয়ে উঠে আপন রূপে।
সন্তানদের নিয়ে এলাম প্রানপ্রিয় ক্যাম্পাসে।টিএসসির পথে পথে ঘুরে বেড়ালাম আর চির চেনা সেসব স্থানে বসে খেলাম ক্যাম্পাসের সেই ছাত্রকালের অনুভবে।সকালে নাস্তা না খেয়েই বের হয়েছিলাম।ক্ষুধাবৃত্তে চিত্ত অস্থিরতা শুরু করলে ওভার ব্রীজের নীচে ফুটপাতে দৃশ্যমান খোলা হোটেলে এসে আনন্দচিত্তে আমরা দারুণ ভাবে পরাটা, সবজি আর ডিম ভাজি দিয়ে পটাপট নাস্তা সেড়ে নিলাম।খুবই উপভোগ্য ছিলো।এমন সুস্বাদু ছিলো যে বড় কোন হোটেলেও এত স্বাদের পরাটা সবজি খাইনি।
সবারই খুব মজা লেগেছে।অথিরাকে নিয়ে নিমা মার্কেটে গেলে আমি আর ফারাবী পাশেই বানানো চা’য়ের দোকানে চায়ের অর্ডার দিলাম।ফারাবীও চা খাবে বলে জানালে ওর জন্যও অর্ডার দিলাম।দুজনে ওখানেই বসে চা খেতে থাকলাম।ফারাবী প্লাষ্টিকের ড্রামের উপর বসে আর আমি পাশের দেয়াল সংলগ্ন সিড়িতে বসে চা খেতে থাকলাম।
ফারাবী একটু পর হঠাৎ আমাকে বললো,
— বাপিয়া, তোমার এখানে বসে চা খেতে খারাপ লাগছে না!
— কেন বাবা?তোমার এমন মনে হলো কেন?
আমার কথায় যেন সে একটু লজ্জা পেল।মনে মনে ভাবলো,বাপিয়াকে এই কথা জিজ্ঞেস করা মনে হয় ঠিক হয়নি
— বললাম,কোন সমস্যা নেই বাবা।আমিতো এমনই।সেই সেদিন যেমন ছিলাম,আজও আমি তেমনই আছি।
সময় আর বয়সে শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে বটে কিন্তু মানসিকতা এতটুকুও বদলায়নি।তাইতো অনেক কাছের প্রিয় মানুষের কেমন জানি অচেনা স্বরূপের বদলে যাওয়ায় অনেক অবাক হতাম,মন খারাপ হতো কিন্তু এখন আর হইনা।
ভাবি কিভাবে পারে এমন…..?
সমাজবিজ্ঞানে এমন পরিবর্তন পড়িনি কখনো কিন্তু জীবনের বিজ্ঞানে এ এক অঅন্যরকম অংক।সে বা তারা জিনগত ভাবেই এমন যা আগে সেই স্বরূপে বিকশিত ছিলো না।সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের ঘটকেই নিজেকে মেলে ধরে উচ্চ আকাশের ওপারে আর বাকী সেদিনের সেই সম্পর্ক অন্যতে করে ফেলে অকপটেই।
নিমারও অবশ্য এত হাইজেনিক আর আভিজাত্য দেখানোর বাড়াবাড়ি নেই।উচ্চ সম্ভ্রান্ত বংশীয় পরিবারের সন্তান এমনই হয় কেননা হঠাৎ করে পাওয়া আর কিছু হয়ে যাওয়া লোকজনই এমন বদলে যায় সহজেই।
আমি মনে হয় সে কাতারে নিজেকে আজ ভিড়াতে পারিনি।পারবোও না কোনদিন।আজ আমার মাঝে সেই আমিই আছি।আজও আমি ক্যাম্পাসে সেই সেদিনের মতোই টিএসসি বারান্দায় গলা ছেড়ে গান গাই,জড়িয়ে ধরি প্রানের সেই বন্ধনের বন্ধুকে।তাইতো হলো না আজও আমার বড় হওয়া….
তাইতো,নিমা মাঝে মাঝেই আমাকে বলে,
— তুমি একটুও বদলালেনা
আজও ভাবি তাই,আর কত বড় হবো নাদের আলী?সাত প্রহরের বিল কবে দেখাবে আমাকে?তন্ন তন্ন করে কবে খুজে আনবে একশ আটটি নীল পদ্ম?
নিমা,অথিরা আর ফারাবী একদম যেন আমিই।আমারই আদলে গড়া, আমাই সত্ত্বার ধারোকে যেন ধারিত ।আমি যা,তারা যেন তাই।সহজ কিছুই যেন সহজেই মিশে তাদের সাথে,আমার মতো হয়ে।হয়ে যায় আমাতে তাহাতে একাকারে।এখানে সেখানে যেখানেই দাঁড়িয়ে যাই,তাতেই বসে আনন্দ আত্মহারায় প্রান উজার করে উপভোগ করে ভালবাসায় ভরা ধরণীর সকল অধরা।
০৫.০১.২৩